রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন

গরম না পড়তেই রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির হাহাকার

গরম না পড়তেই রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির হাহাকার

স্বদেশ ডেস্ক:

গরম না পড়তেই রাজধানীতে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোথাও আবার পানি পেলেও দুর্গন্ধের কারণে মানুষ পান করতে পারছে না। গোসল, বাথরুমসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন স্থানীয়রা। বিশুদ্ধ পানি পেতে দোকান থেকে কেনার পাশাপাশি ওয়াসার পাম্পেও দীর্ঘ লাইন দিতে হচ্ছে।

রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দীর্ঘদিনের। গরম এলেও বিভিন্ন এলাকায় পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না ঢাকা ওয়াসার। বিভিন্ন প্রকল্প চলমান থাকলেও তাতে প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন না নগরবাসী। ওয়াসার কর্মকর্তারা সব সময় দাবি করেন পানির চাহিদার তুলনায় তাদের সক্ষমতা বেশি আছে। কিন্তু তা কেবল খাতাকলমেই।

বাস্তবে মানুষ ওয়াসার পানি সরাসরি পান করতে পারে না। পাইপলাইনের মাধ্যমে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ফুটিয়ে তারপর বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রে দেয়ার পরও গন্ধ থেকে যায়। এ বছরও গরম পড়তে না পড়তেই ওয়াসার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু তারপরও পানি না পাওয়ায় গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।

রাজধানীর পশ্চিম শ্যাওড়াপাড়া এলাকার শামীম সরণি থেকে শুরু করে চন্দ্রিমা সড়ক ও আশপাশের এলাকায় গত ১০ থেকে ১২ দিন ধরে ওয়াসার পানি পাচ্ছেন না কয়েক হাজার এলাকাবাসী। এ কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারা।

একাধিক এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পানি পান করা, গোসল, টয়লেটসহ আনুষঙ্গিক কাজে অসুবিধায় পড়ছেন তারা। আর এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। খোদ ওয়াসাও তাদের গ্রাহকদের জিম্মি করে পানির ব্যবসা করছে। ছোট এক গাড়ি পানির মূল্য যেখানে ৩০০ টাকা রাখার কথা সেখানে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে কাগজেকলমেই এক হাজার টাকা।

এছাড়া আরো ৫০০ টাকা বকশিস দিতে হচ্ছে গাড়ি চালককে। কিন্তু যারা ওয়াসার গাড়ি থেকে পানি কিনতে পারছেন না তারা জার পানি কিনে খাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও জার পানির ব্যবসায়ীরাও ঝোপ বুঝে কোপ মারছেন। তারা ৫০ টাকার পানি গ্রাহকদের কাছ থেকে নিচ্ছেন ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

এছাড়া পানি সঙ্কটের কারণে নতুন আরেকটি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতর মানুষকে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছে, সেখানে পানি সঙ্কটে হাত ধোয়ার এ কাজটি করতে পারছেন না তারা। শুধু এ এলাকায় নয়, দোলাইরপাড় এলাকায় দীর্ঘদিন থেকেই পানি সঙ্কট রয়েছে। সেখানে শীতকালে কিছুটা সামাল দিতে পারলেও গরম এলেই শুরু হয় হাহাকার।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওয়াসা থেকে যে পানি দেয়া হয় তাতে ফেনা থাকে এবং দুর্গন্ধ। এ এলাকার পানির পাইপলাইন দীর্ঘদিনের পুরনো। কিন্তু ওয়াসা ওই পাইপ বদলায় না। এ ছাড়া অনেক বাড়িওয়ালা চুরি করে পানির লাইন নিয়েছেন। এ সময় সুয়্যারেজ লাইনের সাথেও অনেক স্থানে পানির লাইনের সংযোগ হয়ে গেছে। এ কারণে পানিতে দুর্গন্ধ মিশে যাচ্ছে। পানি সঙ্কটের কারণে খালের পাশে থাকা ওয়াসার পাম্প থেকে সরাসরি পানি নিতে দীর্ঘলাইন দিতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। রাত-দিন হাড়ি-কলস নিয়ে সেখানে মানুষকে লাইন দিতে হয়। অনেক সময় এক কলস পানি নিতে তিন থেকে চার ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয়।
একইভাবে মীরহাজিরবাগ, মুগদা, মানিকনগর, বাসাবো থেকে বাড্ডা পর্যন্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট চলছে। এ এলাকায় সারা বছরই ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকে। পানি ফুটিয়ে খাওয়া ছাড়া কেউ চিন্তায়ই করতে পারে না।

পানির দুর্গন্ধ বিষয়ে ওয়াসার পরিচালক (টেকনিক্যাল) এ কে এম সহিদ উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা খুব সমস্যায় আছি। সায়েদাবাদে ওয়াসার যে পানি ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থা আছে সেখানে শীতলক্ষ্যা থেকে পানি আসে। কিন্তু নদীর পানি খুবই দূষণযুক্ত। যাকে আমরা হাই অ্যামোনিয়া বলি। এর কারণে পানিতে দুর্গন্ধ হচ্ছে। এটি নিরসনে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ওই পানির মধ্যে আমরা এক ধরনের ছোট কলাগাছের মতো উদ্ভিদ ছেড়ে দেবো। যার লেজ বড় হলে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করবে। আজ থেকেই এ কাজ শুরু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা এ উদ্যোগ থেকে সুফল পাব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877